Friday, October 27, 2023

Filled Under:

ইসলামের ইতিহাস: সংক্ষিপ্ত পরিসরে চৌদ্দশ বছরের গৌরবময় যাত্রাকাহিনী

 

মূল বইটির কাজ ১৩৮৯ হিজরি মোতাবেক ১৯৬৯ সালেই সমাপ্ত হয়েছিল। ওদিকে বাংলায় অনূদিত বইটি পাঠকদের হাতে এসেছে ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে। বইটির ভাষা যেন পাঠকদের জন্য সর্বোচ্চ পর্যায়ের সহজবোধ্য হয়, এখানে সংক্ষিপ্ত পরিসরে উল্লেখিত ইতিহাসের অজস্র তথ্য যেন পাঠকের বিরক্তি ও একঘেয়েমির কারণ না হয়ে ওঠে, সেজন্য অনুবাদক ও সম্পাদকের চেষ্টার কোনো কমতি ছিল না। বইটির নানা জায়গায় তাদের দুজনের আলাদাভাবে সংযোজিত সুবিশাল টীকা, যা কখনও মূল লেখকের বক্তব্যকে বাংলা ভাষাভাষী পাঠকদের কাছে আরও স্পষ্ট করার জন্য, কখনও আবার তার আলোচনায় না আসা বিষয়কে তুলে আনার জন্য, তাদের এই কঠিন পরিশ্রমেরই স্বাক্ষর বহন করে।

পাশাপাশি বইটির পুনঃনিরীক্ষণে ছিলেন ইসলামী ইতিহাস বিষয়ক জনপ্রিয় লেখক ইমরান রাইহান, যিনি ইতোমধ্যেই মৌলিক গ্রন্থ সুলতান আলপ আরসালান ও আব্বাসি খিলাফাহ, এবং সংক্ষিপ্ত অনুবাদ-গ্রন্থ সুলতান জালালুদ্দিন খাওয়ারিজম শাহ-এর মতো তিনটি বই দিয়ে ইতিহাসপ্রেমী পাঠকদের মনে খুব চমৎকার এক আস্থার স্থান তৈরি করে নিয়েছেন।

বইটির পাঠ-পর্যালোচনা করতে গিয়ে এতক্ষণ ধরে এর ইতিবাচক দিকগুলো নিয়েই বলা হলো কেবল, এবার আসা যাক উন্নতির দিক সংক্রান্ত আলোচনায়। নেতিবাচক দিক বলছি না এ কারণেই যে মানুষ নিজে এবং তার হাত ধরে আসা কোনোকিছুই কখনও শতভাগ নিখুঁত থাকেনি, বরং সময়ে সময়ে নানাজনের ‘উন্নতির দিক’ সংক্রান্ত পরামর্শই তাকে এবং তার সৃষ্টিকে পারফেকশন তথা পরিপূর্ণতার দিকে নিয়ে যায়।

১) বইটিতে নামসংক্রান্ত বিভ্রান্তিতে পড়তে হয়েছে মাঝে মাঝেই। এর মূল কারণ আরবের অধিবাসীদের নামগুলোর বিশালাকৃতি। কখনও নামের এক অংশ, আরেক জায়গায় নামের অন্য অংশ- এমন করার ফলে মাঝে মাঝেই বুঝতে অসুবিধা হয়েছে যে আসলে কার কথা বলা হচ্ছে। ফলে বেশ কয়েকবারই পেছনে গিয়ে খুঁজে খুঁজে যোগসূত্র বের করে আবার সামনে এগোতে হয়েছে, যা ইসলামের ইতিহাস বিষয়ক নবীন পাঠকদের জন্য কষ্টসাধ্য কাজ। না, নাম খুঁজে আনাটা না, বরং একই ব্যক্তির নামের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার। হয়তো মূল লেখকই এমনটা রেখেছেন, তবে অনুবাদক-সম্পাদকের প্রতি অনুরোধ থাকবে এই সহজীকরণের দিকে নজর দিতে, একই নাম ব্যবহার করতে।

২) একই ব্যক্তির একই নামের দু’রকম উল্লেখের বিষয়টিও নজরে এসেছে। যেমন- বাইজান্টাইন সম্রাট নিকিফোরাসের নাম একবার ‘নিকিফোরাস’ (পৃষ্ঠা: ১৮৪) ও পরের পৃষ্ঠাতেই ‘নাইসিফোরাস’ হিসেবে এসেছে। একই বিষয় দেখা গিয়েছে তুর্কি সেনাপতি আফশিন/আশফিনের বেলাতেও, যাকে ‘আফশিন’ (পৃষ্ঠা: ২০৮-০৯) ও ‘আশফিন’ (পৃষ্ঠা: ২০৯) উভয় নামেই সম্বোধন করা হয়েছে। এই ভুলগুলো কম্পিউটারে টাইপ করার সময়ের ভুল হবার সম্ভাবনাই বেশি। ফলে এগুলো খুব সহজেই সংশোধনযোগ্য।

৩) সাল অর্থাৎ কোনো একটি ঘটনা সংঘটনের সময় সংক্রান্ত কিছু জায়গাতেও খটকা লেগেছে। উদাহরণস্বরুপ দুটো দিকের কথাই বলা যাক।

ক) ‘উসমানি সাম্রাজ্য’ অধ্যায়ের ‘মাগরিবে আরবী নিয়ন্ত্রণ’ (পৃষ্ঠা: ৩১১) অংশে দুটো স্থানে ১৯০০ এর পরবর্তী সালের কথা উল্লেখ আছে, যা সম্ভবত ভুলক্রমে লেখা হয়েছে। যেমন- এই অংশে উল্লেখ করা সিনান পাশার জীবদ্দশা ১৫০৬ থেকে ১৫৯৬ সাল পর্যন্ত বিস্তৃত হলেও তার তিউনিশিয়া জয়ের সময় হিসেবে ১৯৭৪ এর কথা লেখা আছে। যদি আমি ইন্টারনেট থেকে ভুল সিনান পাশাকে বেছে না নিয়ে থাকি, তাহলে এখানে সাল সংক্রান্ত একটি ভুল হয়েছে।

খ) একই রকমের একটি বিচ্যুতি দেখা গিয়েছে ‘আরব দেশগুলোর পরিস্থিতি’ অধ্যায়ের ‘জামাল উদ্দিন আফগানি’কে নিয়ে আলোচনাতেও। তার জীবদ্দশা ১৮৩৯ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত বিস্তৃতি হলেও তাকে মিশর থেকে বিতাড়নের সাল হিসেবে ১৭৮৯ লেখা (পৃষ্ঠা: ৩২০) রয়েছে।

৪) হতাশ হয়েছি মূল লেখকের বইয়ে মোঘল সাম্রাজ্য নিয়ে মাত্র একটি পৃষ্ঠা বরাদ্দ থাকায়, যেখানে এই সাম্রাজ্যের তিন শতাধিক বছরের ঘটনাবলীও বইটির সংক্ষিপ্ত আলোচনার নীতিতে অন্তত কয়েক পৃষ্ঠা আলোচনার দাবিদার।

৫) যে লেখক এত চমৎকার একটি বই লিখতে পারেন, তার সম্পর্কে জানবার আগ্রহ হবে যেকোনো পাঠকেরই। দুর্ভাগ্যবশত, বইয়ের পেছনে ‘আরবের বিখ্যাত আলিম’ শব্দত্রয় ছাড়া ড. মুহাম্মাদ ইবরাহীম আশ-শারিকি সম্পর্কে পুরো বইয়ে জানবার আর কোনো উপায়ই নেই। তাই লেখক পরিচিত যুক্ত হওয়াটা নিঃসন্দেহে অনুসন্ধানী পাঠকদের মনকে শান্ত করবে; এই লেখক সম্পর্কে, তার কর্মপরিধি সম্পর্কে আরও জানার সুযোগ করে দেবে।

0 comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();

Copyright @ 2013 ইসলামের দাওয়াত.