Tuesday, January 3, 2017

Filled Under:

ইসলামে প্রচলিত ভিত্তিহিন বানোয়াট কাহিনী: খিযির (আ)এর দীর্ঘ জীবন লাভ বা এখনও বেঁচে আছেনঃ


নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে প্রেরিত হওয়ার আগেই খিযির মারা গেছেন। কারণ, আল্লাহ তা‘আলা এরশাদ করেন,
﴿ وَمَا جَعَلۡنَا لِبَشَرٖ مِّن قَبۡلِكَ ٱلۡخُلۡدَۖ أَفَإِيْن مِّتَّ فَهُمُ ٱلۡخَٰلِدُونَ ٣٤ ﴾ [الانبياء: ٣٤]
“আপনার পূর্বে কোন মানুষকে আমি অনন্ত জীবন দান করিনি। সুতরাং আপনার মৃত্যু হলে তারা কি চিরঞ্জীব হবে?” (আম্বিয়া ৩৪)।
আর যদি তিনি জীবিত থাকতেন, তাহলে তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর অনুসরণ করতেন এবং তাঁর সাথে জিহাদে শরীক হতেন। কেননা আমাদের নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম সকল মানুষ এবং জিন জাতির নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। মহান আল্লাহ বলেন,
﴿ قُلۡ يَٰٓأَيُّهَا ٱلنَّاسُ إِنِّي رَسُولُ ٱللَّهِ إِلَيۡكُمۡ جَمِيعًا﴾ [الاعراف: ١٥٨]
 “বলুন, হে মানবমণ্ডলী! তোমাদের সবার নিকটে আমি আল্লাহ প্রেরিত রাসূল” (আ'রাফ ১৫৮)।
ইবনে ওমর (রাদিয়াল্লাহু ‘আনহু) বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর জীবনের শেষাংশে একবার আমাদেরকে নিয়ে এশার ছালাত আদায় করলেন। তিনি সালাম ফিরে উঠে দাঁড়ালেন এবং বললেনঃ
«أَرَأَيْتُمْ لَيْلَتَكُمْ هَذِهِ فَإِنَّ عَلَى رَأْسِ مِائَةِ سَنَةٍ مِنْهَا لاَ يَبْقَى مِمَّنْ هُوَ عَلَى ظَهْرِ الأَرْضِ أَحَدٌ»
“তোমরা আজকের রাত সম্পর্কে কিছু জানো কি? (মনে রেখো) বর্তমানে যারা ভূ-পৃষ্ঠে রয়েছে, তাদের কেউ এই রাত থেকে নিয়ে একশত বৎসরের মাথায় বেঁচে থাকবে না” (বুখারী ও মুসলিম)। উক্ত হাদীসও প্রমাণ করে যে, খিযির মৃত্যুবরণ করেছেন। অতএব, তিনি কারো ডাকে সাড়া দেন না এবং কাউকে পথ প্রদর্শনও করেন না।
সূরা কাহাফে আল্লাহ মূসার (আ) সাথে আল্লাহর একজন বান্দার কিছু ঘটনা উল্লেখ করেছেন। কুরআনে এ বান্দার নাম উল্লেখ করা হয় নি। তবে সহীহ হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, এ বান্দার নাম ‘খাযির’ (প্রচলিত বাংলায়: খিযির)। এ একটি ঘটনা ছাড়া অন্য কোনো ঘটনায় খিযির (আ)-এর বিষয়ে কোনো সহীহ বর্ণনা জানা যায় না। তাঁর জন্ম, বাল্যকাল, কর্ম, নবুয়ত, কর্মক্ষেত্র, এ ঘটনার পরবর্তী কালে তার জীবন ও তাঁর মৃত্যু সম্পর্কে কোনো প্রকারের কোনো বর্ণনা কোনো সহীহ হাদীসে জানতে পারা যায় না। তিনি আবে হায়াতের পানি পান করেছিলেন ইত্যাদি কথা সবই ইহূদী-খৃস্টানদের মধ্যে প্রচলিত কথা মুসলিম সমাজে প্রবেশ করেছে।
আল্লামা মাউসিলী বলেন, খিযির (আ) ও ইলিয়াস (আ) দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন, তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ-কে দেখেছেন বা কথা বলেছেন, তাঁর পরে বেঁচে আছেন, ইত্যাদি অর্থে বর্ণিত সকল হাদীসই মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তিনি বলেন, ইমাম আহমাদ ইবনু হাম্বালকে খিযির (আ) ও ইলিয়াস (আ) এর দীর্ঘ জীবন ও জীবিত থাকার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হয়। তিনি বলেন... শয়তানই এ বিষয়টি মানুষদের মধ্যে প্রচারিত করেছে। ইমাম বুখারীকে প্রশ্ন করা হয়, খিযির (আ) ও ইলিয়াস (আ) কি এখনো জীবিত আছেন? ইমাম বুখারী বলেন, তা অসম্ভব; কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ বলেছেন: ‘তোমরা আজকের রাত্রিটির কথা মনে রাখবে। আজ রাত্রিতে পৃথিবীর বুকে যারা আছে আজ থেকে একশত বৎসরের মাথায় তাদের কেউই পৃথিবীতে অবশিষ্ট থাকবে না।’[1] ইবনুল জাওযী খিযির (আ) ও ইলিয়াস (আ) এর দীর্ঘজীবনের বিষয়ে বলেন, এই কথাটি কুরআনের আয়াতের পরিপন্থী।
[1] বুখারী, আস-সহীহ ১/৫৪; মুসলিম, আস-সহীহ ৪/১৯৬৫, নং ২৫৩৭। [2] সূরা (২১) আম্বিয়া: আয়াত ৩৪।

0 comments:

Post a Comment

'; (function() { var dsq = document.createElement('script'); dsq.type = 'text/javascript'; dsq.async = true; dsq.src = '//' + disqus_shortname + '.disqus.com/embed.js'; (document.getElementsByTagName('head')[0] || document.getElementsByTagName('body')[0]).appendChild(dsq); })();

Copyright @ 2013 ইসলামের দাওয়াত.